ইতিহাস🏹🏹

অটোমান-সাফাভি দ্বন্দ্ব: মুসলিম বিশ্বের দুই শক্তিশালী সাম্রাজ্যের সুদীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস


 (((৩য় পর্ব)))

--------------------------------------------------------------------

দীর্ঘ ২৩ বছরের যুদ্ধ শেষে ১৫৫৫ সালে পারস্যের শাহ তামাস্প সুলতান সুলেমানের সাথে শান্তিচুক্তি করতে বাধ্য হন। এই চুক্তির পর সাফাভি ও অটোমানদের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হয়। সেই সাথে দুই সাম্রাজ্যের সীমানা নির্ধারণের পাশাপাশি ইরানের শিয়া মুসলিমদের মক্কায় হজ্বের অনুমতি দেওয়া হয়। বিনিময়ে সাফাভিরা অটোমান সুলতানদের ইসলামের খলিফা হিসেবে মেনে নেয়।


কিন্তু এই চুক্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৫৭৮ সালে সুলতান তৃতীয় মুরাদ ককেশাস দখল করেন। যা সাফাভি সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। এরপর ১৫৯০ সালে সাফাভিদের হারানোর পর শাহ আব্বাসের সাথে কনস্টান্টিনোপল চুক্তি করেন তৃতীয় মুরাদ। এই চুক্তি অনুসারে সাফাভিরা ককেশাস অটোমান সুলতানের কাছে ছেড়ে দেন। সেই সাথে তৃতীয় মুরাদকে নিজেদের খলিফা হিসেবেও মেনে নেন।


কিন্তু শাহ আব্বাস ছিলে সাফাভি বংশের শ্রেষ্ঠ শাহ। তিনি সহজেই চুক্তি মেনে নেননি। চুক্তির কয়েক বছর পর শাহ আব্বাস অটোমানদের উপর পাল্টা আক্রমণ করেন। ১৬০৩ সাল থেকে ১৬১৮ সালে মধ্যে শাহ আব্বাস পুনরায় ইরাক, ককেশাস ও পূর্ব আনাতোলিয়ার হারানো ভূখণ্ড উদ্ধার করেন। কিন্তু তিনি তা ধরে রাখতে পারেননি।


১৬২৩ সাল থেকে ১৬৩৯ সাল পর্যন্ত সুলতান চতুর্থ মুরাদ সাফাভিদের উপর হামলা করে আব্বাস যা দখল করেছিলেন তার বেশি উদ্ধার করেন। ১৯৩৯ সালে দুই সাম্রাজ্য জুহাব চুক্তি স্বাক্ষর করে, যেখানে সুলতান সুলেমানের আমাসিয়া চুক্তি মোতাবেক পুনরায় দুই সাম্রাজ্যে সীমানা পুনরায় নির্ধারণ করা হয়।


শাহ আব্বাসের সাথে অটোমানদের যুদ্ধ; Image Source: Historum


অটোমানদের সাথে সাফাভিদের শান্তিচুক্তি হলেও ইরানের শাহদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে সেখানকার সুন্নি মতাদর্শের সেনারা। যাদের অধিকাংশ ছিলেন আফগান এবং উজবেক। আর তাদের নেতৃত্ব দেন নাদের শাহ। তিনি ছিলেন একজন যোদ্ধা। ১৭৩৬ সালে সাফাভিদের হটিয়ে তিনি নতুন রাজবংশের ঘোষণা দেন। যা আফশার নামে পরিচিত। নাদের শাহ ইরানকে সুন্নি রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন।


এদিকে নাদের শাহ অটোমানদের অনুরোধ করেন শিয়াদের প্রচলিত মতবিরোধী সুন্নি বা জাফারি হিসেবে ঘোষণা করার। এবং শিয়াদের ধর্মচর্চা বন্ধ করে দেওয়ার। অটোমানরা দ্বিতীয় বিষয়টি মেনে নিলেও প্রথম অনুরোধ সরাসরি প্রত্যাখান করেন। নাদের শাহ ইরানকে সুন্নি রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করলেও অটোমানরা তাকে স্বীকৃতি দেননি।


নাদের শাহের ইচ্ছা ছিল সুন্নি রাষ্ট্র ঘোষণা করে পরবর্তীতে সাম্রাজ্যে পশ্চিমে বিস্তৃত করবেন। তার এই ফন্দি বুঝতে পেরেই অটোমান সুলতানরা তাকে স্বীকৃতি দেননি। এতে তার সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। যদিও তা অটোমানদের জন্য বড় কোনো হুমকি হয়ে উঠতে পারেনি।


নাদের শাহ; Image Source: Historum


১৭৪৭ সালে নাদের শাহের মৃত্যুর পর তার রাজবংশেরও ইতি ঘটে। পরবর্তীতে যে সকল রাজবংশ ইরান শাসন করেছে তারা অটোমান সুলতানদের ইসলামের খলিফা হিসেবে মেনে নিয়েছে। পরবর্তী যা কিছু বিরোধ হয়েছে তার কারণ ছিল সাম্রাজ্যের সীমানা নিয়ে। তবে এতে বড় কোনো বিরোধ সৃষ্টি হয়নি। ফলে ১৭৪৭ সালের পর অটোমান ও পারস্যের কোনো শাহদের সাথে যুদ্ধ হয়নি।