তুরস্ক ও বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে চমৎকার একটা পোষ্ট। 





কাসেম সোলাইমানির পর এখন ফোকাস পয়েন্টে আছেন এরদোয়ান।  এরদোয়ান এখন আরব আমিরাত আর ফ্রান্সের বিপুল মাথাব্যাথার কারন। এই দুই ক্যাম্প এই মুহূর্তে বিপরীত অবস্থান নিয়েছে লিবিয়া আর পূর্ব ভূমধ্যসাগরে। সেই সাথে  শোনা যাচ্ছে  তুর্কি ফোর্সের মোকাবেলায়  ফ্রান্স 

আসাদ বাহিনীকে  কিছু মিলিটারি সহযোগিতাও করছে ভিতর ভিতর।   

.  

.  

ফ্রান্সের ম্যাকরন  একজন বড় মাপের হিপোক্রেট। তুরস্ক  আর ফ্রান্স দুইটাই ন্যাটো অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্র , সেই সুত্রে এই দুই দেশের একে অপরকে মিলিটারি সহযোগিতা দেয়ার কথা ছিল। অথচ যেখানেই তুরস্ক এগিয়েছে সেখানেই ফ্রান্স আরব আমিরাতকে সাথে নিয়ে বিপরীত অবস্থানে গেছে। ন্যাটো আসাদ বিরোধী অথচ ফ্রান্স আসাদকে এখন ইন্ডাইরেকটলি সাপোর্ট দিচ্ছে। জাতিসংঘের সিকিউরিটি কাউন্সিলের পার্মানেন্ট সদস্য রাষ্ট্র হওয়া স্বত্বেও ফ্রান্স জাতিসংঘ সাপোর্টেড লিবিয়ার জিএনএ সরকারকে সাপোর্ট না দিয়ে ওয়ার ক্রিমিনাল হাফতারকে সাপোর্ট দিয়েছে। লেবাননকে নিয়ে নতুন আঙ্গিকে শুরু করেছে কামড়াকামড়ি। 

 . 

 .

ফ্রান্স আর তুরস্ক উভয় দেশ লেবাননকে তার বলয়ে আনার চেষ্টা করছে। বৈরুত ব্ল্যাস্টের পর ম্যাক্রন আর তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয়ে বৈরুত দর্শনে গিয়ে লেবাননকে নানান ভাবে সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। তুরস্ক নানান বিজনেস ডীল দিয়ে লেবাননের চাকরির বাজারককে চাঙ্গা করার আশ্বাস দিয়েছে, সেই সাথে আছে  ইকোনোমিক প্যাকেজ, মেডিক্যাল প্যাকেজ, ইনফ্রা স্ট্রাকচার গড়ার প্যাকেজ।  আর ফ্রান্স ইতিমধ্যে তাদের এক ব্যাটেলিয়ান সেনা লেবাননে পাঠিয়ে দিয়ে লেবাননের রাষ্ট্রপতি মাইকেল উনের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করছে। যেই মাইকেল উন আজ ফ্রেঞ্চ টিভিতে এক সাক্ষাতকারে বলেছে লেবানন ইসরায়েলের সাথে শান্তি স্থাপনের জন্য রেডি।  

 . 

 . 

লেবানন এবার আরও অস্থির হয়ে উঠবে। এমনিতেও বৈরুত ব্লাস্টের পর  জনগনের চাপের মুখে সরকার পড়ে যাওয়ার পর ক্ষমতায় কারা যাবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে অস্থিরতা, তার উপর এখন শুরু হয়েছে পরাশক্তির ডাইরেক্ট ইনফ্লুয়েন্স। যদিও লেবাননে তুরস্কের জনপ্রিয়তা ফ্রান্সের চাইতে অধিক, কিন্তু ক্ষমতার লড়াইতে লেবানিজ আভ্যন্তরীণ দলগুলো পরাশক্তির বলয়ে নতুন ভাবে দেশকে অস্থির করে তুলবে।  

 . 

  .

গতকাল ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এডিটরিয়াল বোর্ডের কাছে দেয়া এক সাক্ষাতকারে আমেরিকার ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন সোজা সাপ্টা বলে দিয়েছেন এরদোয়ানকে  ক্ষমতাচ্যুত করতে তার সরকার ক্ষমতায় আসলে যা যা করার করবে যেমন এরদোয়ানের বিরোধী দল গুলোকে সহযোগিতা, তুরস্কের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ইত্যাদি। এই সাক্ষাতকারের ভিডিও নিয়ে গতকাল তুরস্কের মিডিয়ায় খুব হই চই হয়েছে। ভিডিওর জবাব দিয়েছে সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা , প্রমিনেন্ট সাংবাদিক, থেকে শুরু করে বিরোধী দলের কিছু নেতা। মনে হচ্ছে বাইডেন এরদোয়ানকে সরাতে গিয়ে তুরস্কে বরং এরদোয়ানের পপুলারিটি বাড়িয়ে দিয়েছেন।  হিতে বিপরীত হলেও এতে করে তুরস্কের অভ্যন্তরে অস্থিরতা অনেকগুন বেড়ে যাবে। একদিকে বিরোধী দল যারা আমেরিকার সাহায্য কামনা করবে তাদের এক্টিভিটি নতুন করে প্রাণ পাবে, আর তাতে করে এরদোয়ান সরকার বাইরের হস্তক্ষেপ থামানোর প্রয়াসে বিরোধী দলগুলোর উপর দমন পীড়ন নামাবে। এরদোয়ানের মুখপাত্র  এই ব্যাপারে বলেছেন, "তুরস্ককে যেমন খুশি তেমন ভাবে নাচানোর দিন এখন আর নাই। যদি কেউ মনে করে থাকে তারা পারবে, তবে তারা চেষ্টা করে দেখতে পারে। সময় মতন তারা তাদের প্রচেষ্টার মুল্য দিব। " 

.  

আরব আমিরাত ঘটা করে ইসরায়েলের সাথে ডিপ্লোম্যাটিক আর ইকোনোমিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। আমিরাতের সাথে আগেই এসব সম্পর্ক  লুকিয়ে ছাপিয়ে ছিল, এবার তা সবার সামনে আসল। ্মিডিয়ায় এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে, আরব বিশ্বের মানুষ নানানভাবে রিএক্ট করছে, আর গতকাল আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে আমিরাতে তারা কোন এন্টাই সেমেটিক,  আদতে যা এন্টাই-জায়োনিস্ট, কথা বার্তা সহ্য করবে না। যদি কেউ এই ভাষা ব্যক্ত করে তবে সরকারকে জানালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

.  

২০২০ সাল যেভাবেই চলুক না কেনো, ২০২১ সালের মধ্যপ্রাচ্য হবে আরও গরম, আরও অস্থির।