গুপ্তসংঘ সাদা দাড়িওয়ালাদের ইতিবৃত্তঃ


তুর্কি ইতিহাসের অঘুজ অধ্যায়ের পাতায় পাতায় গানে কবিতায় “আকসাকাল” দের উপস্থিতি লক্ষনীয়। আকসাকাল (Aqsaqal) মানে বয়ষ্ক ব্যক্তি যার দাড়ি সাদা যা সমাজের জ্ঞানী ও গোত্রের প্রধান (বে) নির্দেশ করে। এখনো অনেক তুর্কমান গোত্রের প্রধানকে “আকসাকাল” বলে ডাকা হয়।

কিন্তু সর্ব প্রথম এই নামের উৎপত্তি হয়,

“দেদে করকুত” নামে এক কায়ি’অঘুজ ব্যক্তির মাধ্যমে, তিনি প্রথম “আকসাকাল”।

তিনি ছিলেন জ্ঞানী ও দার্শনিক। তিনি তার সময়ে তুর্কমেনবাসির সমস্যার সমাধান ছিলেন;

ছিলেন গল্পকার, কবি, গায়ক, আরো অনেক গুণের অধিকারী। সকল তুর্কিদের কাছে তিনি আদর্শ পূর্বপুরুষ। এসব থেকেও তার একটি পরিচয় অনেক বড়;রতিনি নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সাথে সাক্ষাত করতে মদিনা সফরে যান। সেখানে থেকে তিনি একটি সুসংবাদ বহন করে নিয়ে আসেন,


“নিশ্চয় একদিন কুস্তন্তুনিয়া বিজিত হবে। সেই বাহিনীর অধিনায়ক কতোইনা উত্তম এবং সেই বাহিনি কতোই না উৎকৃষ্ট বাহিনী।”

(মাসনাদে আহমাদ ৪/৩৩৫; ১৮৯৫৭)


নিজ বসতিতে ফিরে দেদে-করকুত এক নতুন আমিতে পরিণত হয়, অঘুজ সর্দার এর সাথে আলোচনা করে, দৃঢ় সংকল্প করে তারা এই অভিযানে অংশ নিবে। সেই থেকে এক মিশনের স্বপ্ন দেখেন, মিশন “কিজিল এলমা”।

“কিজিল এলমা” মানে লাল আপেল,

কিন্তু প্রচীন তুর্কীভাষায় “কন্সটান্টিম্পল/রোম” এর নামও “কিজিল এলমা”, (এই নাম পরে রোমানরা নিষিদ্ধ করে)।যা তুর্কিস্থান থেকে পশ্চিমে।

এই শহর ফাতাহ করার নিমিত্তে গঠিত গুপ্তসংঘই “আকসাকাল”। যদিও আরো নামে পরিচিত।

আমরা অনেকেই চিনি সাদা-দাড়িওয়ালা নামে।

যারা বহন করেছিলো, প্রোফেসি (সুসংবাদ)।


হে আগন্তুক (মুসাফির)


এই পথ কোথায় গিয়েছে?

কিজিল এলমা’র দিকে।


তোমার মনজিল কি? জীবন উৎসর্গ (শাহাদাত)।

ভুসলত কি? স্বদেশ।

স্বদেশ কোথায়? সমগ্র বিশ্ব।


এরকম কিছু বাক্যে আছে যা, এই সংঘের কোড ওয়ার্ড। তাদের লক্ষ্য, দর্শন, কর্মপন্থা নির্দেশ করে অঘুজ ২৪ গোত্র ছাড়াও অন্যন্য তুর্কিদের ভিতর তাদের কার্যক্রম ছিলো। প্রায় সব গোত্রপ্রধানরা নামে-বেনামে এই সংঘের আয়ত্তে ছিলো। তারা সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলো। তাই ‘তাদেরকে ডাকা হতো পবিত্র/মহান সংগঠক”। অটোম্যান সাম্রাজ্যের স্বপ্নদ্রষ্টা আর্তোগ্রুল গাজী, তার বাবা সুলেমান শাহ ও ছেলে অটোম্যান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা উসমান গাজী সবাই “আকসাকাল” সদস্য ছিলেন।


“সাদা-দাড়িওয়ালা”রা জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প, সংস্কৃতি চর্চা করতো, সুফিদের আশ্রয়দিতো,

গুপ্তচর তৈরি করতো, স্পাই নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলো, ইন্টেলিজেন্সি সরবরাহ করতো।

নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে, তারা রাজ্যের ভিতর ছায়া রাজ্য তৈরি করেছিল। অন্য রাজ্য তারা ইচ্ছা অনুযায়ী গোপনে পরিচালনা করতে পারতো। বরং সুলতানরা তাদের ইন্টেলিজেন্সির মুখাপেক্ষী থাকতো। নিখুঁত বুদ্ধিমত্তা, চৌকশ গুপ্তচর, চুলচেরা হিসাব দিয়ে তারা যেকোন পরিস্থিতি কন্ট্রোলে নিয়ে আসতো, যুদ্ধের মোড় ঘুড়িয়ে দিতো। তাই বলা যায়

“সাদা-দাড়িওয়ালারা” স্বেচ্ছাসেবি আকসাকালিলার প্রথম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো।


তারা তাদের চিহ্ন “তিনটি নতুন চাঁদ” ছাড়া কিছুই প্রকাশ করতো না। তাদের সংঘে কয়েকটি স্তর ছিলো। একটি দেলুলার:এরা সাহসি বীর যোদ্ধা।

নির্দিষ্ট কাজে এসাসিনের ভুমিকাও পালন করতো, যুদ্ধে তারা ২য়/৩য় ধাপে অংশ নিতো।

একটি গুপ্তচর: এদের ছোট থেকেই আলাদাভাবে গড়ে তোলা হতো। বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম ও বুদ্ধিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হতো। তারপর বিভিন্ন রাষ্ট্রে পাঠানো হতো, প্রাসাদে, গীর্জায়, সেনাবাহিনিতে মিশে যেতো। অন্য গুপ্তচরদের চেক দিতো।যুদ্ধের সময় এরা ৩য়/৪র্থ ধাপে থাকতো।


তাদের ভিতর সুফিদের একটি গ্রুপ ছিলো, তারা মানুষকে নীতি-নৈতিকতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, উন্নত চরিত্র গঠন,সৎসাহস ও অন্যায়ের প্রতিবাদ আইনুল ইয়াকিন ও আধ্যাত্মিকতা শিক্ষা দিতো, সমাজ ব্যবস্থায় নৈতিকতা বজায় রাখতো।

শায়েখ আহমেদ ঈসাভি, শায়েখ সদরুদ্দিন কুনেভি, শায়েখ আহি এভরান, শায়েখ এদেব আলী প্রমুখ উল্লেখযোগ্য ।


তাদের মধ্যে একদল রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতো।

তুর্কিদের অদম্যতা, যুদ্ধ জয়, রাজ্যজয়, শত্রুদের ষড়যন্ত্র থেকে ইসলামি সম্রাজ্য রক্ষা, নাইট ও মঙ্গোলদের আগ্রাসন থেকে প্রতিরোধ, পুনরায় রাজ্য সংগঠিত করা এই “সাদা-দাড়িওয়ালাদের” অবদান।তাদের প্রতিষ্ঠাতা “দেদে-করকুত” রাঃ।

ঐতিহাসিক রশিদুদ্দিন হামদানির (১৩১৮) ভাষ্যমতে “দেদে করকুত” একজন সাহাবি। সম্মান দিয়ে রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু বলা শ্রেয়।

-

সাদা পাহাড়ের দেশ থেকে বাতাসে ভেসে শীত আসছে।দিগন্ত বিস্তৃত স্তেপ ভূমির পাহারের চুড়ায় বরফ জমতে শুরু করেছে, গাছপালা তেমন নেই গুল্ম আর ঘাসে ভরা, সমান্তরাল ভুমির কোথাও নদীর কাছে ঢালু, কোথায় মাঝে মাঝে টিলা।শীতের আমেজ প্রকট হচ্ছে, এখানকার শীত হীম-ভয়ংকার, গ্রীষ্মেই অনেক পাহাড়ের বরফ গলেনা।বসতি পরিবর্তনের এটাই সময়, যাযারব তুর্কিদের প্রতি বছরের নিয়ম। গ্রীষ্মে ককেশাশ , শীতে এরাল ভ্যালি। বসতির উপদেষ্টা ডুবন্ত সুর্যের দিকে তাকিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন আছে, কারন তারা এখন রাষ্ট্রহীন।তাদের পুর্বপুরুষরা নীল আকাশের নামে রাষ্ট্রের নাম রেখেছিলো “গোকতুর্ক”।পৃথিবীর এপাশ-ওপাশ করে গড়ে তোলা ‘গোকতুর্ক’ রাষ্ট্র নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।পশ্চিমে ভলগা ও রোমান আর পুর্বে চাইনিজ ও মঙ্গোলরা দুই ধাপে রাষ্ট্র কেড়ে নিয়েছে।”কায়ি”বসতি ও তাদের মিত্ররা এখন রাষ্ট্রহীন, ভাগ্যের উপর নির্ভির করে অটোকান পাহাড়ের নীচে আশ্রয় নিতে যাচ্ছে।ওখানে শীত কম, নদী আছে, পশুগুলো ঘাস ও পানি পাবে।তুর্কিদের যাযাবর জীবনে পশুই একমাত্র বেঁচে থাকার অবলম্বন।পশু ভালো থাকলে বসতি ভালো থাকবে।

দেদে-করকুত কায়িদের উপদেষ্টা, উপায়ান্ত বের করাই তার কাজ, বসতির বে বসতি শাসন করে, আরো বে’রা আছে সাহায্যকারি। কিন্তু সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ নয়, বাস্তবায়ন করাও কঠিন কাজ।হিসাবে গড়মিল হলে ধ্বংস, অথবা অন্য গোত্রের দাসত্ব।এবারের বসতি স্থানান্তর দুঃশ্চিন্তায় ঘেরা, পুর্ব দিক থেকে মঙোল বা চীনারা আক্রমন করতে পারে।পশ্চিমে আছে জন্তুর মত লালচুলের সিথিয়ানরা,এরা চোরাগোপ্তা হামলা করে। স্থানান্তরের সময় হামলা করলে সকল পশু সম্পদ একসাথে পেয়ে যায়, শিশু ও নারীদের দাস বানাতে পারে।যতবেশি দাসী ততবেশি জনসংখা বাড়াতে পারবে, অন্যদের থেকে শক্তিশালী হবে অথবা বিক্রি করে দেবে।পাশেই রোমান সম্রাজ্য, অর্ধেক পৃথিবীর মালিক, ওদের দাসের বাজার চড়া।সব কিছু বিবেচনা করেতে, দেদে করকুত ধ্যনমগ্ন। একটা স্থায়ি সমাধান বের করা বড় জরুরি,সুর্য ডুবে যাচ্ছে।


কায়ি তুর্কিরা অঘুজ তুর্কির একটি শাখা। কায়িদের জাতিধারা হাজার বছরের পুরানো। তারা স্বাধিনচেতা, বীরবিক্রমে টিকে আছে কঠিন ভূমিতে । কথনো ককেশাসে, কখনো আনাতোলিয়ায় কখনো ওটোকেনে, হাজার বছর ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, স্থায়ী ভূমি করতে পারেনি। স্থানিয় বাসিন্দারা সামানন্ত সমাজকেন্দ্রিক, এদের সাথেও বনিবনা হয়না। কায়িরা আকাশের একমাত্র মালিক টেঙ্গরিতে বিশ্বাসি, আর কোন দেবতা নাই। সামানদের অনেক দেবতা, তাদের সমাজও বৈষম্যমুলক।তুর্কিদের সংস্কৃতি ও বিশ্বাস রক্ষা করে যাযাবর থকতে হচ্ছে। আগে এমন ছিলোনা, তাদের পুর্বপুরুষ অঘুজ খান পৃথিবীর চার কোনাই শাসন করেছে। কোন জাতি দন্দ্ব ছিলোনা।কিন্তু এখন সময় পাল্টে গেছে, কোন নিয়মনীতি নেই।জোর যার দখল তার, শক্তি যার বিচার তার।অঘুজদের ভবিষ্যত কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ইনাল-সার-ইয়াভকুই হারানো রাজ্যের নবম শাসক, লজ্জার বেদনা নিয়ে উপদেষ্টা দেদে-করকুতের সাথে আলাপে বসেছে।তাদের কষ্ট ও দুশ্চিন্তা অনেক বিষয়ে। অন্য গোত্রগুলোর অবস্থা ভালোনা, ঘোড়া ও পশু চুরি নিয়ে ঝগড়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যপার, কৃষি জমি দখল নিয়ে সমস্যার অন্ত নেই। স্তেপ ভুমিতে ঘোড়া ও পশুই অবলম্বন। চলাফেরা, যুদ্ধ, শিকার ঘোড়ার উপর নির্ভরশীল , খাদ্য,পোষাক, সোনা পশুপালের উপর নির্ভরশীল। শক্তি ও নিরাপত্তা তলোয়ার, তীর, বর্শার উপর নির্ভরশীল। তাদের আছে শক্তিশালী রীতিনীতি ও সংস্কৃতি , নারী-পুরুষের সমান সম্মানের সমাজ, তাদের পুর্বপুরুষের বেধে দেয়া অলঙ্ঘনীয় অঘুজরীতি। পারিপার্শ্বিক চাপে তাও হুমকির সম্মুক্ষিন।


তারা নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নিলো বাইরের দেশগুলো ঘুরে দেখবে। তারা কিভাবে সম্রাজ্য গড়লো, তাদের গোপন শক্তি কি? অঘুজ তুর্কিরা এতো শক্তিশালী ও সাহসি যোদ্ধা হয়েও রাষ্ট্রহীন।রোমানরা ও পারস্যরা হাজার বছর পাল্লাদিয়ে বিশ্ব শাসন করছে। শেষের বছরগুলোতে যুদ্ধের পরে যুদ্ধ করে গেছে দাগিস্তান ও আনাতোলিয়ায়। তদের সীমান্তবর্তী হওয়ায়, যুদ্ধের চাপ তাদের গোত্ররাষ্ট্রের উপর পড়ছিলো, তাতে তারা দুর্বল হয়ে যায়। পুর্বদিকের চাইনিজ গৃহযুদ্ধ শুরু হলে, অঘুজরা হয়ে যায় চিড়েচ্যাপ্টা। এবার অন্য রাষ্ট্র পর্যাবেক্ষন করার পালা।খবর যোগার করতে বিভিন্ন জায়গায় লোক পাঠালো।বসতি স্থানান্তর করেই বেড়িয়ে পড়বে “দেদে-করকুত”।


শীতের ব্যবস্থা শেষে, খবর পর্যবেক্ষণে দেদে-করকুত। পারসিয়ানদের অবস্থা ভালোনা, সম্রাট খসরু খুন হয়েছে, উত্তরাধিকার নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেছে। এই অবস্থায় রোমানরা আনাতোলিয়া, দাগিস্থান দখল নিয়েছে। কাজার জাতি তাদের সখ্য হয়েছে। এদের সথে কায়িদের অনেকদিনের বিরোধ। তাদের পাশের সীমানা সিরিয়ায় চলছে আরব আতংক। আরব সম্পর্কে তেমন জানাশোনা নেই তাদের এমন রাষ্ট্রের নামই শোনেনি। আরবরা নাকি বিনা রক্তপাতে গোত্র শাসন থেকে একটি রাষ্ট্র বানিয়েছে, তারপর আবার বিনা রক্তপাতে একটি রাজ্য জয় করেছে। অন্য রাজ্যের রাজাদের নিকট চিঠি পাঠিয়েছে, আনুগত্য করার জন্য, কেউ কেউ অনুগতও হয়েছে।তাতেই আশপাশের রাজা-বাদশাহের ঘুম হারাম। দেদে-করকুত বেশ আগ্রহ পেলো , কারন তাদেরও গোত্র শাসন ব্যবস্থা, তাদের পুর্বপুরুষ অঘুজ খানও সমস্ত রাজ্যে চিঠি পাঠিয়েছিলো। অনেক রাজ্য বিনা বাধায় জয় করেছিলো। আরো একটি বিষয় তার মনোযোগ কেড়েছে, আরবের সাফল্যের নায়ক , নিজেকে স্বর্গীয় দ্যুত(নবী) বলে পরিচয় দিয়েছেন।

তারাও একমাত্র আকাশেত দেবতাকে মানে, তাদের পুর্বপুরুষে কেম ও বাকসি ( kam & baksi) নামে দুজন ছিলো স্বর্গীয় বার্তাবাহক , তারাই সমাজের সর্বোচ্চ সন্মানিত ব্যক্তি। ।পুর্বপুরুষের গল্পগুলির ধারক, বাহক দেদে-করকুত গোত্রপ্রধানদের সাথে সভা করলেন , সিদ্ধান্ত হলো দেদে-করকুত আরবিস্থান যাবে অঘুজদের প্রতিনিধি হয়ে।

সফর মাস ব্যাপি দীর্ঘ হলো। পারসিয়া, আনাতোলিয়া, রোম, সিরিয়া হয়ে আরবের মদীনায় পৌঁছালেন।তার অঘুজ প্রতিনিধিত্বের খবর প্রকাশ করলেন। সম্মানজনক আতিথেয়তা পেলেন। নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগলেন। কয়েকজন সহযোগী (সাহাবি) এর সাথে আলাপ করলেন, জেনে নিলেন আরবের পুর্ব থেকে বর্তমান পর্যন্ত অন্ধকার ও আলোর ইতিহাস, কত কষ্ট আর ত্যাগ স্বীকার করেছেন তারা। তাদের নেতার বিষয়ে জানলেন, তাঁর পুর্বপুরুষের কাহিনি জানলেন, এক শিশুর মরুভূমিতে নির্বাসন থেকে তাদের বংশের সুত্রপাত, নিজ গোত্রের শত্রুতায় দেশত্যাগ করেছিলেন জানলেন। মদীনায় এসে সকল গোত্রকে এক করে রাষ্ট্র বানালেন, কয়েক বছরের সংগ্রাম শেষে বিনা রক্তপাতে মক্কা জয় করলেন।

তাদের নেতা একজন নবী, তিনি যা বলেন তাই হয়। বিশ্বে বৈষম্য,অন্যায় নির্মূল করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে তিনি এসেছেন। তাঁর স্বর্গীয় কিতাব আছে, সেখান থেকে বানী প্রচার করেন। মানুষ দলে দলে তাঁর ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে। দেদে-করকুত আশার আলো দেখলেন, জাতি গঠনের মন্ত্র পেলেন।

এবার সাক্ষাতের মাহীন্দ্রক্ষণ, দেদে-করকুত নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সাক্ষাতে বসলেন, নিজের কথা জানালেন, যা জানার জানলেন, তাকে স্বীকার্য দিয়ে বায়াত দিলেন, ফিরে আসার আগে , জিজ্ঞাস করলেন তারা কি কোনদিন তাদের এলাকায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পারবে? (বাইজান্টাইন যেহেতু বড় শত্রু)

জবাবে শুনলেন সুসংবাদ,

“নিশ্চয় একদিন কনস্টান্টিনোপল বিজিত হবে। সেই বাহিনীর অধিনায়ক কতোইনা উত্তম এবং সেই বাহিনি কতোই না উৎকৃষ্ট বাহিনী।”

(মাসনাদে আহমাদ ৪/৩৩৫; ১৮৯৫৭)


ইতিহাস পরিবর্তনের সুসংবাদ নিয়ে, আলোকিত দেদে-করকুত ধন্যচিত্তে বসতিতে ফিরে এলেন।


বসতিতে ফিরে দেদে-করকুত গোত্রপ্রধানদের নিয়ে বসলেন,সব কিছু খুলে বললেন,সুসংবাদ জানালেন, ইসলাম ধর্মের কথা জানালেন, ৪জন কবুলও করলো।দেদে-করকুত নতুন পাওয়া জ্ঞান ও সাহসে সবকিছু বিচার বিবেচনা শুরু করে দিলেন, গোত্রে গোত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকলেন। দাড়ি বড় রাখলেন আরবদের মতো, সেই দাড়ি সাদা হলো মানুষ তাকে “আকসাকাল” বলে ডাকা শুরু করলো, সাদা-দাড়িওয়ালা। কয়েকদিনের মধ্যে প্রভাবশালী কুটনৈতিক হলেন, সব সমস্যার সমাধান দিতে থাকলেন।তিনি পরিবার প্রথা শক্তিশালী করলেন,বিয়ে অবশ্যই ছেলে-মেয়ের দুজনের পছন্দেই হতে হবে। । শিশুদের প্রতি নজর দিলেন, এদেরকে সঠিকভাবে গড়তে পারলে ভালো জাতি গঠন করা যাবে। প্রথমে তিনি বাচ্চাদের শিক্ষামূলক গল্প শুনাতেন। পরে আবিষ্কার করেন “কুপাজ” (kupaz) নামের দুই তারের এক বেহালা সাদৃশ্য বাদ্যযন্ত্র, কুপাজ বাজাতেন আর কাব্য গাইতেন। গানের মাধ্যমে তাদের পুর্বপুরুষের ঘটনাবহুল শিক্ষনিয় কাহিনি বর্ননা করেন, প্রতিদিন বাচ্চারা ভিড়তো তিনি কুপাজ বাজিয়ে তাদের গান শোনাতেন, লোকে তাকে ওযান-আশিক বলতো, মানে গানের পাখি।এভাবে “ওযান” নামে এক পদের সুচনা হয়, যা সেই সমাজের সন্মানিত ও আধ্যাতিকতার স্থান।তিনি মহাকাব্য রচনা করেন,১২টি মহাকাব্য ও কুপাজ বাজানোর কম্পোজিসন নিয়ে রচনা করেন তার “কিতাবে দেদে করকুত”।


রাজনীতিতে নতুন চাল খাটান, ৬৫৯ সালে ৯জাতি নিয়ে “কঙ্গার ইউনিয়ন” করেন।

সবাইকে আঘুজ খানের রীতিনীতিতে উজ্জীবিত করেন, মাতৃভুমির স্বপ্ন দেখান।

৬৮০ সালে “বরু বদুন” নামে একটি গুপ্তসংঘ গঠন হয়।৫০জন চৌকস যোদ্ধার,

এই সংঘের ৫টি বৈশিষ্ট্যঃ

১।স্বর্গীয় খোদার কাছে আত্মসমার্পন।

২।জাতি ও স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা।

৩।আনুষ্ঠানিক বিধিতে আনুগত্য।

৪।জ্ঞান ও শৃঙ্খলা।

৫।নিজস্ব সংস্কৃতি ও মুল্যবোধে বিশ্বায়ন।


তাদের খেতাব হয় “জাতির নেকড়ে”।

ওজিফা দেওয়া হয়, চায়না ও শত্রু রাষ্ট্রের খবর সংগ্রহ করা, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে তাদের শক্তি কমিয়ে দেওয়া, প্রতিহত করা।


দেদে করকুত বিভিন্ন জায়গা সফর করতেন,

কপুজ বাজাতেন আর নবী’র সাক্ষাতের কবিতা গাইতেন। মানুষ ধারনা করতো তিনি ভবিষ্যত বলতে পারেন।সব মানুষ তাকে বিশ্বাস করতো,

তার পরামর্শ নিতো, যেন তাদের “আলামিন”!!


তিনি আব্বাসি খিলাফাত যুগে বেঁচে ছিলেন।

তিনি তার বসতির ১০ম শাসক কায়ি ইনাল হান ও পরবর্তী ৩জন শাসকের প্রভাবশালী উপদেষ্টা ছিলেন।

বলা হয় তিনি ৩০০ বছর বেঁচে ছিলেন, কোথাও ২৯৭ বছর।আবার বলা হয় নবী(সঃ) এর ওফাতের ১০০ বছর পরও তিনি বেঁচেছিলেন, তিনি একবার ইসলামের দাওয়াত নিয়ে লেযগিইল প্যাগানিজদের কাছে যান,ওরা তাকে হত্যা করে। দাগিস্থানের আশে পাশে কোন গুহায় ‘ইমাম করকুত’ নামের কবর পাওয়া গিয়েছিলো,পরে রহস্যময় কারণে হারিয়ে যায়।


তিনি তুর্কিদের আদর্শিক পুর্বপুরুষ, তাই তার নামের আগে ‘দেদে’ মানে দাদা বা নামের শেষে ‘আতা’ মানে পিতা সম্বোধন করা হয়।

“কিতাবে-দেদে-করকুত” এর অনুবাদ কপি ১৮১৫ সালে জার্মানির রয়্যাল লাইব্রেরি অফ ড্রেসডেনে আবিষ্কারের পর বিশ্ব সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে হইচই পড়ে যায়।

মহাকবি দেদে-করকুত লিজেন্ডে পরিনত হয়,

বিশ্ব ইতিহাস পায় তার হারিয়ে যাওয়া কাহিনি,

মহাকাব্যটি তার একটি শিক্ষামুলক কিতাবও হলো জ্ঞান ও নৈতিক শিক্ষায় ভরা, তা গানের সুরে মানুষের মুখে মুখে চর্চা হতে লাগলো।মহাকাব্যটি ইউনেস্কোর বিভিন্ন লিস্টে জায়গা করে নেয়।